মনে পাপ থাকার এই একটা লক্ষণ- মনে হয়, সকলে বুঝি সব জানে !

বাংলা সাহিত্যের অভূতপূর্ব নারীচরিত্র- কুসুম। হেয়ালী ও প্রবল আত্মসম্মানের অপূর্ব মেলবন্ধন কুসুম। যুক্তি ও আবেগ- এ দুইয়ের সমন্বয় মানবচরিত্রে কমই হয়। তীব্র আবেগ ও যুক্তিবোধ কুসুমকে করে তুলেছে এক অনন্যসাধারণ চরিত্র।

চারু চিন্ময়ী নৈঋতা, শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ;

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

“পুতুলনাচের ইতিকথা”- গভীর মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। 

মানবহৃদয়ের সুখ,দুঃখ,আনন্দ,বেদনা,প্রেম,দায়িত্বশীলতা,আত্মসম্মানবোধ,সহায়ত্ব ও অসহায়ত্ব এক চরম অনিবার্যতার দিকেই মানবজীবনকে বয়ে নিয়ে চলে। সৃষ্টি হয় জটিল সম্পর্কের জাল যা বড়ই অচ্ছেদ্য। এই জীবনের মঞ্চে মানুষ কেবল পুতুলের মতই নেচে নেচে সুর তোলে সংবেদনের তারে। মানুষের হাতে যেন কিছুই নেই; কেবল অনিবার্যতার পথে যাত্রা ছাড়া।

প্রতিটি চরিত্রের অতি সূক্ষ্ম মনোজাগতিক বিশ্লেষন পুতুলনাচের ইতিকথাকে করে তুলেছে তেমনই এক জীবনের গল্প। বাংলার পথ-ঘাট, উথালপাথাল নদী,চাঁদের আলোয় রুপোলী রাত- কখনোবা নিশুতি অন্ধকার- এ অঞ্চলের মানুষের মনোজগতের মতই, অনির্বচনীয়। “পুতুলনাচের ইতিকথা”-র চরিত্রগুলো কখনো বা জোয়ারের ঢেউ- খেয়ালী, অভিমানী। কখনোবা, অমাবস্যার মতন জমাট অন্ধকার।

উপন্যাসের নায়ক, শশী। প্রকৃতি ও মানুষের মনোজগতকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ শশীর নেশা। জীবনের ক্ষুদ্রতর ঘটনাসমূহ তার মাঝে নতুন নতুন দর্শনের জন্ম দেয়। কারোর মৃত্যু শশীর জীবনের প্রতি মমত্ববোধের জন্ম দেয়, জীবনকে সহসা কাম্য ও উপভোগ্য বলে মনে হয়।  প্রবল বর্ষণের বিষন্ন রাতের মতন জীবনের টুকরো টুকরো ঘটনা যেন ছায়া ছবি হয়ে শশীর মনোজগতকে আবিষ্ট করে রাখে।মানুষকে ভালোবেসে কাছে টেনে নেয়াই তার চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রবল ভালোবাসতে পারা মানুষটিও হারিয়ে ফেলে তার ভালোবাসার মানুষ, কুসুমকে। শশী চরিত্রে উচ্চমানবীয় বৈশিষ্ট্য এবং মানবীয় নীচতা বিপরীত এই দুই বৈশিষ্ট্যের সাংঘর্ষিক সহাবস্থান লক্ষণীয়। নায়ক মাত্রেই সে মানবীয় দোষ ত্রুটির উর্ধ্বে নয়, তারই উদ্ভাস শশীর চরিত্র। ভালো-মন্দ, দায়িত্ববোধ একইসাথে তীব্র অনমনস্কতা ও অবহেলা – শশীকে করে তুলেছে জীবনবাস্তবতার সত্যিকারের নায়ক।

বাংলা সাহিত্যের অভূতপূর্ব নারীচরিত্র- কুসুম। হেয়ালী ও প্রবল আত্মসম্মানের অপূর্ব মেলবন্ধন কুসুম। যুক্তি ও আবেগ- এ দুইয়ের সমন্বয় মানবচরিত্রে কমই হয়। তীব্র আবেগ ও যুক্তিবোধ কুসুমকে করে তুলেছে এক অনন্যসাধারণ চরিত্র। 

 “আপনার কাছে দাঁড়ালে আমার শরীর এমন করে কেন ছোটবাবু?

উনিশ শতকের নারী চরিত্র কুসুমের এই সহজ প্রশ্ন যেন তথাকথিত সমাজব্যবস্থায় প্রগতির মৃদু সুবাতাস। যে সমাজ চিরকাল দমন করতে চায় নারীর শারীরিক অস্তিত্বের সাবলীল প্রকাশকে, কুসুমের সহজাত প্রেমের প্রকাশ যেন তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।

কুসুমের পরিশুদ্ধ আবেগের প্রতি শশীর অবহেলা কুসুমের আত্মসম্মানবোধকে আঘাত করে। কুসুম জানে প্রিয় মানুষের কাছ থেকে অনুভূতির মর্যাদা না পেলে সরে আসতে হয়।

***The opinions shared in this article are the author’s own and do not represent this platform’s stance.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *