দুইটা কথা মনে রাখবেন,
এক. নাম হলো আশফাক নিপুণ।
দুই. নিপুণের নির্মাণে নৈপুণ্যের ঘাটতি থাকে না।
জুবায়ের রিহাদ, শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
কাহিনি, অভিনয়, দৃশ্যায়ন (Screenplay), সংলাপ, সম্পাদনা (Editing) ও সাজসজ্জা (Makeup) -সবকিছু মিলিয়ে শত শত নিপুণ হাতের সংস্পর্শে গড়ে উঠেছে এক অনন্য ঐকতান ‘মহানগর’ ! কোথাও খেই না হারিয়ে অবিরাম বয়ে গেছে বিচিত্র সব গল্প, সংলাপ ও অভিনয়ের সৌন্দর্য। নানাবিধ তুমুল চাপের বশীভূত হয়েও আশফাক নিপুণের নৈপুণ্যের কোনো কমতি ঘটে নাই। শিরদাঁড়া শক্ত বলেই নির্মাতা অকাতরে অজস্র সাহস দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। এককথায় ‘মহানগর’ হলো অভিনেতাদের অভিনয়ের মঞ্চ। অভিনেতা ও অভিনেত্রীগণের তীক্ষ্ণ অভিনয়ের ভরাট গলায় সংলাপ ও কাহিনি যেন আরো জমজমাট হয়ে উঠেছে।
অপূর্ব চোখ ধাঁধানো তুখোড় অভিনয়ের বুননে কখনো গা শিউরে উঠেছে, কখনো সবেগে হৃদস্পন্দন বেড়ে উঠেছে, কখনো আবার আবেগ-বিবেকের অনবদ্য আগমন ঘটেছে। এছাড়া ইন্ট্রোতে দৃশ্যমান ভাস্কর্যের বুক-পিঠ-জুড়ে লালচে রঙের ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ ও ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লেখাদ্বয়ই যেন ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠা প্রতিটি পর্ব দেখার জন্য দর্শকমনে অব্যর্থ এক মোহ তৈরি করে। পুরো গল্প নিয়ে না হয় না-ই বললাম। যখন অধিকাংশ নাটকের অভিনয় দেখে একই মোশাররফ করিমকে খুঁজে পাচ্ছিলাম, ভিন্নতা বা নতুনত্বের কোনো সংস্পর্শ পাচ্ছিলাম না, তখনই আলগোছে অভিনেতা হিসেবে তিনি তিলে তিলে মারা যাচ্ছিলেন।
‘টেলিভিশন’ সিনেমা, ‘ক্যারাম’ নাটক ও ‘হাউজফুল’ ধারাবাহিকের পরে মোশাররফ করিমের বেশিরভাগ অভিনয়ে আমি কখনো মুগ্ধ বা মগ্ন হতে পারি নাই। সিকান্দার বক্স ও অ্যাভারেজ আসলাম চরিত্রদ্বয়-সহ বিভিন্ন নাটকের ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের জন্য মোশাররফ করিমের যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রতি আমার বিপুল অনাস্থা তৈরি হলেও এখন নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে পারি যে, মহানগরের ওসি হারুন চরিত্রের জন্যই মোশাররফ করিম সুমহান হয়ে থাকবেন, অথবা মোশাররফ করিমের জন্যই ওসি হারুন চরিত্রটা মেলাদিন মনে গেঁথে রবে। হারুন চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অবলীলায় স্বীকৃতি জানানোটাও একপ্রকার দুঃসাহস বটে। যে দুঃসাহস দেখিয়ে মোশাররফ করিম অভিনেতা হিসাবে আবারো জিন্দা হতে পেরেছেন। তাছাড়া ‘নক্ষত্রের রাত’ ধারাবাহিকের পরে এবার পুনরায় আফসানা মিমির অভিনয়ে আচ্ছন্ন হতে পেরে ভালোলেগেছে। অবশেষে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের আকস্মিক আগমনে আমি একেবারে নির্বাক হয়ে গেছি।
হলফ করে বলা যায়, ‘মহানগর’-ই নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের আজ অবধি নির্মিত সবচেয়ে সেরা ওয়েবসিরিজ। কারাগার, কাইজার, তাকদির, সিন্ডিকেট, শাটিকাপ-সহ প্রায় প্রতিটি ওয়েবসিরিজকে অতিক্রম করে কাহিনির প্রাসঙ্গিকতায়, সংলাপের প্রগাঢ়তায় , সম্পাদনার সৌন্দর্যে ও নির্মাতার মুনশিয়ানায় ‘মহানগর’ এক দুর্দান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অগণিত গল্পের গর্তে লুকায়িত অসংখ্য সত্যের সংস্পর্শে বাংলাদেশের নাগরিকগণ নগরজীবনের ঘুণেধরা নড়বড়ে জীবনযাপনের মুখ থুবড়ে পড়া মুহূর্তগুলোকে পর্দার পরতে পরতে খুঁজে পেয়েছে বলেই ‘মহানগর’ দর্শক-শ্রোতার কাছে অতি আপন হয়ে থাকবে।
***The opinions shared in this article are the author’s own and do not represent this platform’s stance.