রুম (২০১৫): জীবনের চার দেয়াল থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ও মানসিক শক্তির এক অনবদ্য সিনেম্যাটিক উপাখ্যান। 

সবকিছু ছাপিয়ে রুম সিনেমাটি আমাদের শত প্রতিকূলতা, নিরাশার মধ্যেও এক চিলতে আশা দেখায়, সন্তানের প্রতি মায়ের অকুণ্ঠ ভালবাসায় আমরা সিক্ত হই। তাইতো জ্যাক নির্ভয়ে মাকে বলে, “There are so many things out here. And sometimes, it’s scary, but that’s okay, because it’s still just you and me.”

Dibakor Roy Dipro, Student, EEE;

University of Chittagong.

মনে করুন আপনি ৫ বছরের একটি ছোট বাচ্চা । জন্মের পর থেকে শুধুমাত্র একটি রুমের মধ্যেই আপনার ছোট্ট জীবনটা কাটিয়েছেন । এই রুমে আপনি আর আপনার মা মিলেই আপনাদের পৃথিবী। বাইরেটা মহাশূন্য, যেখানে এলিয়েনরা থাকে। আপনার কাছে চারাগাছ বাস্তব, গাছ না। মাকড়সা আর মশা বাস্তব, কুকুর বা কাঠবিড়ালী বাস্তব না। কারন এগুলো আপনি কখনো নিজের চোখে দেখেননি। আরেকজন আছে, বুড়ো নিক, সে পুরোপুরি বাস্তব কিনা তাও আপনি জানেন না, হয়ত অর্ধেক বাস্তব।

এই ছেলে জ্যাক ও তার মা জয়কে নিয়েই আবর্তিত হয়েছে এই মুভি। মুভি যতই এগিয়ে যেতে থাকে আমরা জানতে থাকি কিভাবে বুড়ো নিক ১৭ বছরের কিশোরী জয় নিউসামকে স্কুলে যাওয়ার সময় অপহরণ করে একটা রুমের মধ্যে বন্দী করে রাখে। ঐ বদ্ধ রুমেই জন্ম হয় জ্যাকের, জয়ের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। মানসিক বিকারগ্রস্ত বুড়ো নিকের পাশবিক আচরণ, ছোট্ট এক অন্ধকার ঘরে দিনের পর দিন আটকে থাকা, খাবার পানির অভাব- জয় জ্যাক এর এই ভয়াবহ নিষ্ঠুর জীবন আমাদেরও নাড়া দেয় প্রচণ্ড।

সিনেমাতে আমরা দেখতে পাই, মা তার সন্তানের জন্য চার দেয়ালের মধ্যে কি চমৎকার এক  পৃথিবী সৃষ্টি করতে পারে। ছোট্ট জয়, যে মাত্র পাঁচ বছরে পা রাখল, তার কাছে এই রুম টাই পুরো দুনিয়া, এর বাইরে আর কোনোকিছুর অস্তিত্ব নেই, এই রুম ঘিরেই তার মা তার জন্য সাজিয়েছে এক অনিন্দ্য জগত।। হঠাৎ এই মা-ই যখন দেখে এই রুমের মধ্যে তার সন্তান আর সুরক্ষিত নয়, তখন সে তার সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিতে ও পিছপা হয়না। অবশেষে তারা সফল হয় এই ‘রুম’ নামক কারাগার থেকে মুক্তি পেতে। কিন্তু তারপর শুরু হয় আরেক লড়াই, ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে থাকা পৃথিবীর সাথে মানিয়ে নেয়ার লড়াই, দীর্ঘ সাত বছরের নির্যাতন আর অত্যাচার ভুলে যাওয়ার লড়াই। কিন্তু সহজেই কী তা ভোলা যায়, যেখানে আপন বাবা তার নিজের সন্তানকে মেনে নিতে পারছে না, মা নতুন এক মানুষের সাথে বসবাস করছে। যেখানে দুঃসহ অতীত প্রতিনিয়ত চোখ বন্ধ করলেই আঘাত করছে।

জ্যাক যেন আরেক বিখ্যাত সিনেমা শশাঙ্ক রিডেম্পশন এর রেড এর প্রতিচ্ছবি, বহু বছর বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে নতুন দুনিয়ার জটিলতায় দিশাহারা, কুটিল এই পৃথিবী থেকে যেন অন্ধকার প্রকোষ্ঠই ভাল। কিন্তু জ্যাক কি পারবে এই নতুন দুনিয়ায় থাকতে, নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে এক ফোঁটা স্নেহ কি পাবে সে?উত্তর মিলবে ২০১৫ তে মুক্তি পাওয়া রুম সিনেমায়। ব্রি লারসন এর অনবদ্য অভিনয়, অসাধারণ সংলাপ এই সিনেমাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। সবকিছু ছাপিয়ে রুম সিনেমাটি আমদের শত প্রতিকূলতা, নিরাশার মধ্যেও এক চিলতে আশা দেখায়, সন্তানের প্রতি মায়ের অকুণ্ঠ ভালবাসায় আমরা সিক্ত হই। তাইতো জ্যাক নির্ভয়ে মাকে বলে, “There are so many things out here. And sometimes, it’s scary, but that’s okay, because it’s still just you and me.”

***The opinions shared in this article are the author’s own and do not represent this platform’s stance.

2 Comments

  1. নৈপুণ্যে ভরপুর একটি আদর্শ বিশ্লেষণ। চমৎকার উপস্থাপনার মাধ্যমে লেখকের বই পড়ার অপ্রাকৃত নেশার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

  2. অসাধারণ লিখনি,যা প্রকৃতপক্ষেই সহজ সরল প্রতিমায় তুলে ধরা।ব্যক্ত লেখনী পড়ে অনুভব হচ্ছিল যেন সত্যি সত্যি গল্প শুনছি অথবা দেখছি(কল্পনা মাত্র)।কথার উত্থান পতনের সৌন্দর্য ও অপার।সকল মায়ের চরণে প্রণাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *